<- back

স্মল বিজনেস অর্গানাইজিং

স্থানীয় অভিবাসীদের মালিকানাধীন ব্যবসাগুলোই কমিউনিটি ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপক

ছায়া সিডিসি

নিউ ইয়র্ক, জ্যাকসন হাইটস (কুইন্স)

Mohammed Digital Graphic Design at Press

“আমি গত ১০ বছর যাবত কমিউনিটিতে আছি। আমি কমিউনিটিতে আমার আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তুলেছি। আমি আমার সেবা গ্রহণকারীদের ভাষায় কথা বলি এবং কমিউনিটির সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অধিকাংশ সেবা গ্রহণকারী আমাদের কাজে সন্তুষ্ট। কারণ আমরা মুনাফার চেয়ে সেবার দিকে অধিক মনোযোগী। অর্থ দ্বিতীয় বিবেচনায় আসে।” – মোহাম্মদ ইসলাম, জ্যাকসন হাইটসে ডিজিটাল গ্রাফিক ইনক এর সত্ত্বাধিকারী।

মোহাম্মদ যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ২০০৪ সালে। নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটির জন্য প্রকাশিত কমিউনিটি সংবাদপত্র বাংলা টাইমস ও ডেইলি বাংলার গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। ২০০৭ সালে তিনি প্রথম তার ব্যবসা শুরু করেন তার বাড়ি থেকে এবং ২০০৯ সালে জ্যাকসন হাইটসে তার স্টোর চালু করেন। মোহাম্মদের ডিজিটাল প্রিন্টিং ব্যবসা ছায়া সিডিসিসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও কমিউনিটি ভিত্তিক ব্যবসা ও সংগঠনসমূহের ছোটখাট মুদ্রণ প্রয়োজন সম্পন্ন করে।

একটি ছোট আকারের একটি প্রিন্টিং ব্যবসাকে তাৎক্ষণিকভাবে কমিউনিটির উপস্থাপক হিসেবে কারও মনে আসার কথা নয়; কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তাই। মোহাম্মদ স্থানীয় বাংলাদেশী ও নেপালি সমিতি ও ক্লাবগুলোকে মুদ্রণ সেবা দিয়ে থাকেন; অংশগ্রহণমূলক অভিন্ন সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও ধর্মীয় পরিচিতির কারণে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। মোহাম্মদের মতে, জ্যাকসন হাইটসের আরও কয়েকটি স্থানীয় ছোট আকারের প্রিন্টার্স রয়েছে, যারা একসময় তার সঙ্গে কাজ করেছে এবং এরপর নিজেরাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের মালিক ও উদ্যোক্তা হয়েছে।

“এখানে (ভাঞ্ছা ঘর) আমি আমার সোসাইটির সভা-সমাবেশ আয়োজন করি। আমি তাদেরকে এখানে আমন্ত্রণ জানাই, আমরা এখানে খাওয়া-দাওয়া করি, এখানে বসি, আলাপ-আলোচনা করি। যেসব লোকের কোনো চাকুরি নেই, আমি তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি। যাদের রাতে ঘুমানোর জায়গা নেই, আমি তাদের থাকার জায়গা খুঁজে দেই”

নেপালি রেস্টুরেন্ট ভাঞ্ছা ঘরের মালিক যমুনা শ্রেষ্ঠা বলেন।

“এই সংকট ইতিপূর্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরো বৃদ্ধি করেছে। আমি ব্যবসাগুলোর মালিকদের সাথে কথা বলে যে দুটি বিষয় সবচেয়ে বড় বলে জানতে পেরেছি, তা হলো তারা জানেন না কিভাবে তারা তাদের ভাড়া পরিশোধ করবেন অথবা তাদের কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করবেন।”

শ্রীমা পান্ডে
ছায়া সিডিসি
স্মল বিজনেস অর্গানাইজিং

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত ছায়া সিডিসি দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভুত নিউইয়র্কবাসীদের সাথে নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল ও বিকাশমান কমিউনিটি গড়ে তোলার পক্ষে কাজ করছে। প্রত্যক্ষ সেবা কর্মসূচি ও কমিউনিটিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কাজের পদ্ধতি সার্বজনীন, যা নিবিড় গবেষণা ও নীতিগত প্রচারণা দ্বারা সমর্থিত।

এই ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকায় ১,০০০ এর অধিক স্টোর এবং ১০০ জনের অধিক ফুটপাতের দোকানি রয়েছে। শতাকরা ৮০ ভাগ ব্যবসায়ীর ৫ জন বা আরো কম সংখ্যক কর্মচারি রয়েছে, ফুটপাতের দোকানিদের ৭০ শতাংশের বেশি বাস করেন জ্যাকসন হাইটসে। যখন করোনা ভাইরাস মহামারী আঘাত হানে তখন স্থানীয়, ক্ষুদ্র ও ইমিগ্রান্টদের মালিকানাধীন ব্যবসাগুলোর উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এ পরিস্থিতি ছায়া সিডিসিকে উদ্যোগী করেছে স্মল বিজনেস অর্গানাইজিং (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করার পদক্ষেপ) গ্রহণ করতে।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করার এর এই মডেল কারিগরি সহায়তা অথবা সরাসরি সেবাদানের সমতূল্য কোন উদ্যোগ নয়। বরং এইসব সীমিত, একবারের সহায়তারও বেশি এবং এক ধরনের ম্যানেজারের মত যোগসূত্র সৃষ্টিকারী হিসেবে কাজ করবে। ছায়া সিডিসি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন চিহ্নিত করে শুধুমাত্র শীতল সুপারিশকারীর ভূমিকা পালন করার পরিবর্তে তাদেরকে সহায়তা করার ব্যাপক-ভিত্তিক পদ্ধতি ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে থাকে এবং এরপর আইনগত সেবা প্রদানকারী  অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের কাজ করে থাকে।

বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময়ে ছায়া’র অন্যতম একটি ভূমিকা ছিল দ্রুত পরিবর্তিত বিধিবিধান সম্পর্কে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অবহিত রাখা, তাদেরকে সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক উৎসের সঙ্গে যোগসূত্র ঘটিয়ে দেয়া এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ, অনুদান ও কারিগরি সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন তৈরি করতে সহযোগিতা করা। এছাড়া ছায়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করে একটি ঐক্যবদ্ধ কন্ঠ সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগসূত্র গড়ে তোলা এবং একটি যৌথ রাজশক্তি শক্তি হিসেবেও কাজ করে; যেমন ইউনাইটেড ফর স্মল বিজনেস এনআরসি কোয়ালিশন এবং এর ক্যান্সেল কমার্শিয়াল রেন্ট ক্যাম্পেইন এর সদস্য হিসেবে।

ডাইভারসিটি প্লাজা
জনসাধারণের জন্য যখন একটি খোলা জায়গার প্রসঙ্গ আসে তখন ক্ষুদ্র ব্যবসার সমস্যা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা স্বীকার করে ছায়া সিডিসি জ্যাকসন হাইটসে ডাইভারসিটি প্লাজার নকশা ও পরিকল্পনার প্রক্রিয়ায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে সুনির্দিষ্টভাবে সমন্বিত ও জড়িত করেছিল। ডাইভারসিটি প্লাজা ২০১২ সালে চালু করা হয় এবং এটি শুধুমাত্র পথচারিদের জন্য একটি উন্মুক্ত স্থান, যা স্থানীয়রা প্রতিদিন ব্যাপকভাবে ব্যবহহৃত হয় এবং কমিউনিটির অনুষ্ঠান ও সমাবেশ এখানে আয়োজিত হয়।

লক্ষ্য

  • ছায়া সিডিসির প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে জ্যাকসন হাইটসে দক্ষিণ এশিয়ান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সেবা ও সম্পদের সঙ্গে পরস্পরের এবং জ্যাকসন হাইটস এলাকার সঙ্গে যোগসূত্র ঘঁটানো।
  • জ্যাকসন হাইটস থেকে ইমিগ্রান্ট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ প্রতিহত করা।

শিক্ষা

  • স্থানীয় ব্যবসার মালিকগণ, যারা এই এলাকায় কাজ করেন ও বসবাস করেন, যারা স্থানীয়ভাবে কেনাকাটা করেন এবং স্থানীয় হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবা গ্রহণ করেন, তারা কমিউনিটির ঐক্য ও স্থায়িত্বের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব মালিকগণ এই এলাকায় এমনভাবে বিনিয়োগ করেছেন, যা জাতীয়ভাবে বিনিয়োগকারী বড় প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য অস্থানীয় মালিকরাও করে না।
  • ক্ষুদ্র ব্যবসা সংগঠিত করা সহজ কাজ নয় এবং নাগরিকদের সাথে ক্ষুদ্র ব্যবসা সংগঠিত করার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। সবাই একরকম নয়। ব্যবসা শুরু ও পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ব্যবসার মালিকরা প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, যা প্রাথমিকভাবে অন্যান্য ব্যবসা মালিকদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন ও সংগঠিত হতে বাধার সম্মুখীণ করতে পারে।
  • জ্যাকসন হাইটসে শুধুমাত্র একটি দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটি নয়। আমরা জাতি ও ভাষাগতভাবে অত্যন্ত বৈচিত্রময়। আমাদের বিভিন্ন ব্যবসা মালিকদের সামর্থ্যের মাঝেও প্রচুর বৈচিত্র রয়েছে। আমাদের নিজস্ব কর্মচারিদের সামর্থ্য ও অনর্গল ইংরেজি ভাষা বলতে না পারার সীমাবন্ধতার কারণে আামাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দক্ষিণ এশিয়ান ক্ষুদ্র ব্যবসা। ফলে অন্যান্য ইমিগ্রান্ট মালিকানাধীন ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোকে সহায়তা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।